কবুতর পালন : সফলতা বনাম ব্যর্থতা

কবুতর পালন : সফলতা বনাম ব্যর্থতা

কবুতর পালনের পদ্ধতি
কবুতর পালনের নিয়ম


মিডিয়ার কল্যাণে আপনি হয়তো শুনে থাকবেন কবুতর পালন করে অমুক মিয়া কোটিপতি , তমুক  মিয়া আজ স্বাবলম্বী ইত্যাদী ইত্যাদী ।  বলছি না যে সেগুলো মিথ্যা,বানোয়াট কাহিনী । কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি শুধু তাদের

সফলতার কাহিনিটা শুনেছেন , সফলতার পেছনের গল্পটা কি আপনি জানেন? কত কাঠ কড়ি তাদের পোড়াতে হয়েছে, কতশত কবুতর মারা গিয়েছে. কতবার তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলো আর কবুতর পালবেন না ?

আপনি হয়তো আরো শুনেছেন কবুতর পালন খুবই লাভজনক , ১২ মাসে ১৩ জোড়া ডিম পাড়ে, অল্প পুজি, অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ ইত্যাদী। কিন্তু আপনি শুধু লাভের দিকটা দেখেছেন লসের দিকটা দেখেন নাই। বাস্তব এমন ও হয় যে ১২ মাসে ১৩ জোড়াতো দূরের কথা , অনেক ক্ষেত্রে ব্রিডিং জোড়াকে বাচানো দায় হয়ে যায় ।

কেন আমরা ব্যার্থ হয়, কি করলে আমরা সফল হবো আজ সেসব বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো।

১. উপযুক্ত বাসস্থান:

উপযুক্ত স্থানে বাসস্থান তৈরী করলে কবুতর অনেক অনাখাঙ্খিত রোগ থেকে রেহাই পাই আবার অনুপযুক্ত বাসস্থান তৈরী অনেক রোগের কারণ হয়ে থাকে।  উপযুক্ত বাসস্থান  তৈরী সম্পর্কিত এই পোস্টটা পড়ে আসতে পারেন।

২. খাবার:

খাবার কবুতরের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে । ভালো মানের খাদ্য দিলে আপনি ভালো মানের ফলাফল পাবেন আর খারাপ/ নোংরা খাবার দিলে ফলাফল খারাপ পাবেন। কবুতরকে কি খাওয়াবেন, কি খাওয়াবেন না, তাদের আদর্শ খাবার সম্পর্কিত এই পোস্টটি পড়ে আসতে পারেন।

৩. ভালো জাত:

ভালো জাতের কবুতর চিনতে হলে অভিজ্ঞতার দরকার আছে, এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে পারেন। শুধু বাহ্যিক রুপ দেখে পাগল হলে চলবে না,  আকার ,ওজন, মারকিং , সুস্থতা ইত্যাদী বিবেচনা করে কবুতর কিনতে হবে। সুস্থ কবুতর চেনার উপায় জানতে এই পোস্টটি পড়ে আসুন।

৪. সঠিক জোড়া:

আপনাকে সঠিক জাতের নর মাদি জোড়া দিতে হবে। আপনি যদি সুস্থ কবুতরের সাথে অসুস্থ কবুতর, ভালো জাতের সাথে নিম্ম মানের , ভুলবশত নরের সাথে নর বা মাদির সাথে মাদি জোড়া তাহলেতো হবে না। নর মাদি কিভাবে চিনবেন তা এখান থেকে পড়ে আসতে পারেন।

৫. খামারে প্রবেশের পূর্বে করনীয়:

 কবুতর খামারে প্রবেশের পূর্বে খামার সহ , খামারের সকল যন্ত্রপাতি জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে। জীবানুনাশক (০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। কবুতরের মুখ ডোবাবেন না, মাথায় হাত দিয়ে লাগিয়ে দিবেন।  খামারে প্রবেশের আগে এবং খামার থেকে বের হওয়ার সময় হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৬. বয়স:

বাচ্চা কবুতর সাধারনত ৫-৬ মাসের আগে ডিম বাচ্চা করে না, আবার নির্দিষ্ট একটা বয়সের পরে কবুতর ডিম বাচ্চা করা বন্ধ করে দেয় । ডিম বাচ্চা আছে এমন জোড়া কিনলে আমি মনে করি ভালো হবে। জানা শুনা কারো কাছ থেকে কিনলে সবচেয়ে ভালো হবে। কবুতরের বয়স কিভাবে নির্নয় করবেন সে সম্পর্কে এখানে পূর্বে পোস্ট করা হয়েছে।


৭. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:

নিয়মিত কবুতর এবং খামারকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে অনেক অনাখাংখিত রোগ থেকে আপনার কবুতর রক্ষা পাবে।প্রতিদিন সকালে খাচার ট্রে পরিষ্কার করতে হবে । দুর্গন্ধ ও পুরনো বিষ্টা থেকে ও অনেক রোগ সৃস্টি হয়।
খাবার ও পানির বাটি, ডিমের হাড়ি ইত্যাদী সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে । খোপে ডিম থাকলে বা বাচ্চা থাকলে খোপ পরিষ্কার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে । নিয়মিত গোসল করাতে হবে ৩-৫ দিন পরপর । কিভাবে গোসল করাবেন তা চাইলে এখান থেকে পড়ে আসতে পারেন।

৮. রোগ ও চিকিৎসা:

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে কবুতরের রোগ নির্ণয় করতে পারা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা।অযথা এবং আন্দাজে কোনো ওষুধ প্রয়োগ করবেন না । বিশেষ করে এন্টিবায়েটিক । মনে রাখবেন ওষুধের অপর নাম কিন্তু বিষ । কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে এখানে অনেক পোস্ট আছে চাইলে পড়ে আসতে পারেন।

বিশেষ পরামর্শ:
*  নতুন খামারী হয়ে থাকলে আগে দেশী কবুতর পালা শুরু করুন । বেশী কবুতর দিয়ে শুরু না করে দু্ই একজোড়া দিয়ে শুরু করুন তাহলে লস হলে খুব বেশি হবে না । কবুতর সম্পর্কে যখন ভালো ধারনা হবে তখন বড় পরিসরে খামার করতে পারবেন।

* ব্যবসা হিসেবে না  নিয়ে শখ হিসেবে নিন। শুরুতে যদি ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনা নিয়ে শুরু করেন তাহলে হয়তো এই লাইনে আপনি বেশি দিন ঠিকে থাকতে পারবেন না।

* পরিবারের সম্মতি আছে কিনা জেনে নিন। কবুতরের মলের গন্ধ, সন্তানের পড়াশুনার ক্ষতি হবে ইত্যাদী কারনে অনেক পরিবার কিন্তু সম্তানদের কবুতর পালনে সম্মতি দেন না ।

* আপনাকে কবুতরের পেছনে যথেস্ট সময় দিতে হবে। আপনার হাতে সময় না থাকলে এসব চিন্তা বাদ দিন।

* আপনার আশেপাশে আরো যারা কবুতর পালন করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

* বিষ্টা, বাসস্থানের ময়লা পরিস্কারের মানসিকতা থাকতে হবে ।

* সবশেষে আপনার ধৈর্য্য থাকতে হবে, তাহলে আপনি অবশ্যই একদিন সফলতার দেখা পাবেন।


কবুতর পালন করে আয়ের সম্ভাবনা:


২০ জোড়া উন্নত বা সৌখিন জাতের কবুতর পালনে প্রাথমিকভাবে ২০০,০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে বৎসরে ৩০০,০০০/- টাকা লাভ করা যায়।
তবে ৩০ জোড়া দেশী জাতের কবুতরের পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ১৫০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে এক বৎসরে প্রায় ৫০,০০০/- টাকা লাভ করা যায়। পরবর্তীতে স্থায়ী খরচের (ঘর, পানি পাত্র, বালতি, মগ, কবুতরের খোপ,

দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড) দরকার হয় না । ফলে পরবর্তীতে লাভ বেশী হয়।

কবুতরের বাজার সম্পর্কে ধারনা পেতে চাইলে এই পোস্টটা পড়ে আসতে পারেন ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ