বুনো কবুতর
![]() |
বুনো কবুতর /জালালী কবুতর |
সাধারণত দুই ধরনের কবুতর আছে পোষা কবুতর ও বুনো কবুতর। বুনো কবুতরকে বন্য কবুতরও বলতে পারো।আমাদের দেশে এরা জালালী কবুতর নামে পরিচিত। ইংরেজিতে Wild Pigeon।বৈজ্ঞানিক নাম columba livia. লম্বায় প্রায় দৈর্ঘ্য ৩১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
বুনো কবুতর নাম হলেও এরা মুলত গ্রাম ও শহরেই বাস করে। এরা মুক্ত, স্বাধীনপ্রকৃতির। বুনে মানে গৃহপালিত বা পোষা নয়। তবে মানুষের কাছাকাছিই এদের বিচরণ।
ছোট-বড় ভবনের কার্নিশে, এয়ারকুলার মেশিনের আড়ালে, সাইনবোর্ডের আড়ালে, পিলারের আড়ালে বাসা করে থাকে। সেখানে ওরা খড়কুটো টেনে বাসা করে নির্বিঘ্নে ডিম-ছানা তুলতে পারে। প্রতিবার এরা দুটি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা হয় ১৫-১৯ দিনে। সদ্য ফোটা ছানাগুলোর বাবা-মা মিলে প্রথম চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত নিজের গলার থলিতে উৎপন্ন অর্ধতরল দুধ খাওয়ায়, যাকে বলা হয় কবুতরের দুধ (Pegion Milk)।
এদের মূল খাদ্য ধান-চাল-গম-সরষে বীজসহ নানা ধরনের ডাল। তবে শহরের কবুতর মানুষের উচ্ছিষ্ট ও খেয়ে থাকে। ধান-চালের আড়তের ছড়ানো-ছিটানো ধান-চাল খায়।
বুনো কবুতর ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ মাইল বেগে উড়তে পারে। এরা একটানা প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে।
পাকা ধান কেটে নেওয়ার পর ওরা বড় বড় ঝাঁকে নামে, খেতে নামার আগ মুহূর্তে ওরা কাছাকাছি-গাদাগাদি অবস্থায় থাকে, মাটিতে নেমেই চারপাশে ছড়িয়ে যায় দ্রুত। বুনো কবুতর একসাথে থাকতে পছন্দ করে। দু’টি থেকে শুরু করে কয়েক হাজার কবুতর একসাথে থাকতে পারে।বুনো কবুতর কখনো অন্য জাতের কবুতরের সাথে জোড় বাধে না।
দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের মানুষ বুনো কবুতরের মাংস খেত, সুযোগ পেলে আজও খায়, বাসা থেকে ডিম-বাচ্চা তুলে এনে খায়। তবে দেশের অনেক এলাকার মানুষই সম্মান করে এদের মাংস খায় না।
ধারণা করা হয়, এই বুনো কবুতরই হলো বিশ্বের সব ধরনের বাহারি কবুতরের আদি পিতামাতা।
কথিত আছে যে বিখ্যাত পীর হযরত শাহ জালাল রাঃ ১৯০৩ সালে ইয়েমেন থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসার সময় ভারতের হযরত নিযামউদ্দিন আউলিয়া উনাকে উপহার স্বরূপ একজোড়া সুরমা রংয়ের কবুতর উপহার দেন। যা জালালী কবুতর নামে পরিচিত।তিনি কবুতর গুলোকে নিজ হাতে খাওয়াতেন, কবুতরগুলো তিনি খুব ভালোবাসতেন। বর্তমানে সিলেট শহরে শাহ জালাল রহঃ এর মাজারে এবং সারা বাংলাদেশে যে সুরমা রংয়ের জালালী কবুতর দেখা যায় তা সবই মুলত এই একজোড়া কবুতরেরই বংশধর। একবার উনার ভাগিনা হযরত শাহ পরাণ রহঃ শখ করে খাওয়ার জন্য কয়েকটি কবুতর জবেহ করেন। বিষয়টি হযরত শাহ জালাল রহঃ এর দৃষ্টিগোচর হয়। হযরত শাহ পরান মামার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে বাবুর্চিকে জবেহকৃত কবুতরগুলোর পালকগুলো আনতে বলেন। অতপর তিনি পালকগুলো আকাশের দিকে ছুড়ে মারেন এই বলে যে"আল্লাহর নামে জিবিত হয়ে যাও"। সাথে সাথে পালকগুলো পূর্ণাঙ্গ কবুতরে পরিণত হয়ে গেল। হযরত শাহজালাল তখন বললেন," ভাগিনা তোমার দ্বীনি শিক্ষা আজ পূর্ণ হল"।
অবাক করার বিষয় আজও শাহ জালাল রহঃ মাজারে লক্ষ লক্ষ কবুতর বাস করে অতচ একটা কবুতর ও মাজার প্রাঙ্গনে মলত্যাগ করে না। মাজারে আগত মানুষ ভালাবাসা স্বরূপ এগুলোকে গম কিনে খেতে দেয়।
সাহসী ও লড়াকু এইসব জালালি কবুতরের মাথা-পিঠ-বুক ঘন-ধূসর রংয়ের, ঘাড়-গলা ধাতব সবুজ, তার ওপরে গোলাপি রঙের আভা রয়েছে। ডানার প্রান্তে যেমন দুটো চওড়া কালো ব্যান্ড আছে, তেমনি লেজের আগায় আছে কালচে একটি আড়াআড়ি ব্যান্ড। পা লালচে, ঠোঁট কালচে। ঠোঁটের গোড়ায় সাদা রং। পুরুষটি ভালো নাচতে-ঘুরতে ও গাইতে পারে। লেজের পালক মেলে দেয় পাখার মতো। এটা করে সঙ্গিনীকে পটানোর সময়। আবার লড়াইয়ের সময় এরা দুই পাখাকে ‘থাবা’ বা ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে।
ছানা হারালে এরাও পাতিঘুঘুদের মতো উড়ে-ঘুরে কাঁদে, ঝাঁকের যে কেউ বিপদে পড়লেও এরা নীরব কান্না বা শোকে ভেঙে পড়ে।
ছবি ; ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত।
0 মন্তব্যসমূহ