কবুতর ভ্যাকসিন/টিকা(Pigeon Vaccine)
আজকের পোস্ট হচ্ছে কবুতরের ভ্যাকসিন নিয়ে। ভ্যাকসিন কি, ভ্যাকসিন করানো জরুরী কিনা,ভ্যাকসিনের উপকারিতা কি,কখন ভ্যাকসিন করাবেন, কিভাবে ভ্যাকসিন করাবেন সেই বিষয় নিয়ে।
একজন নতুন কবুতর পালক যখন থেকেই কবুতর পালা শুরু করেন তখন তাঁর মনে কবুতর পালা সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারনা দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সেই কবুতর পালক প্রথম থেকেই একটা ভয়-ভীতির মধ্যে দিনপাত করে।কবুতরের সামান্য কিছু হলেই ভয়ে আতঙ্কীত হয়ে পড়েন, ফলে তখন তিনি বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শের জন্য ছুটে যান। আর পরামর্শ দাতারা জানুক আর নাই জানুক তাকে একটা পরামর্শ দিবেই। ফলে সেই নতুন কবুতর পালক নিজের অজান্তেই অল্প দিনের মধ্যে মোটামুটি সব ধরনের ঔষধের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলেন। যদি ভাগ্য ভাল থাকে,আর হয়ত সেই যাত্রাই কবুতর বেচে যেতে পারে। আর যদি কবুতর টি মারা যায় তখন মনকে সান্তনা দেন যে তার হায়াত ছিল না। এটাই হল আমাদের সাধারন দৃশ্য। আর এই দৃশ্যের সূত্রপাত হয় ভ্যাকসিন দিয়ে। অধিকাংশ কবুতর পালকের মনে যে কয়েকটি প্রশ্ন থাকে, তাঁর কয়েকটি হল।
১) কোন ভ্যাকসিন দিব? ২) কয় মাস পর পর দিব? ৩) কিভাবে দিব? ইত্যাদি। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন না করে থাকেন ততক্ষণ পর্যন্ত,সেই খামারি মানসিক ভাবে শান্তি লাভ করেন না। দুখজনক হলেও সত্য, এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমাদের দেশে খুব কম লোকেরই সঠিক ধারণা আছে। অনেকেরই ধারনা যে ভ্যাকসিনই সকল সমস্যার সমাধান। ভ্যাকসিন না দিলে কবুতর মারা যাবে, ভ্যাকসিন না দিলে কবুতর টাল হয়ে যাবে,নানা রোগে আক্রান্ত হবে ,ইত্যাদী। ভ্যাকসিন সম্পর্কে ভাল ধারনা দেবার লক্ষে আমার আজকের এই ছোট প্রয়াস। আশা করি এই পোষ্ট পড়ে কবুতর পালকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।
ভ্যাকসিন এর সংজ্ঞাঃ ভ্যাকসিন হচ্ছে নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যাবহ্রত এক ধরনের বিশেষ টিকা। যা সেই রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে তৈরি করা হয়। সেই নির্দিষ্ট রোগের প্রতিরোধক হিসাবে। অসুস্থতা, অক্ষমতা, এবং মৃত্যু সৃষ্টিকারী অনেক কবুতরের রোগ এখন টিকা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ভ্যাকসিন বা টিকা অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে ও তথাকথিত সেলুলার ইমিউন সিস্টেম উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
ভ্যাকসিনের প্রকারঃ ভ্যাকসিন সাধারণত ২ প্রকারের ১)লাইভ ভ্যাকসিন ও ২) কিলড ভ্যাকসিন।
১)লাইভ ভ্যাকসিনঃএকটি ক্ষয়িত টীকা বা প্যাথোজেন যার তীব্রতা হ্রাস করে তৈরি একটা টীকা।এটি দুর্বল সংক্রামক এজেন্ট কে নির্মূল করতে কাজ করে যা নির্দোষ বা কম উৎকট হয়ে পরিবর্তিত হয়। ভাইরাস "হত্যা" দ্বারা এই টিকা উত্পাদিত হয়।
এই টিকা স্বল্প সময়ের জন্য দেয়া হয় ও শরীরের বাইরে প্রয়োগ করা হয়।
২) কিলড ভ্যাকসিনঃঅক্রিয়াশীল বা কিছু উপায়ে হত্যা করা হয়েছে এমন একটি সংক্রামক এজেন্ট থেকে তৈরি একটা টীকা। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য দেয়া হয় ও শরীরের ভিতরে প্রয়োগ করা হয়।
সতর্কতাঃ ১) লাইভ ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় খুব সতর্কতা পালন করতে হয়। যেমনঃমাস্ক,গ্লভস পরিধান করা ও খেয়াল রাখতে হয় যেন ভ্যাকসিন মাটিতে না পড়ে এবংঅবশিষ্ট বা বেচে যাওয়া ভ্যাকসিন পুতে ফেলতে হয়।
২) সুস্থ থাকা সব কবুতরকে ভ্যাকসিন করা যেতে পারে। ৩) চিকিত্সাগতভাবে অসুস্থ এবং দুর্বল কবুতরকে ভ্যাকসিন করা যাবে না।৪) ডিম পাড়বে এমন কবুতর কে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়া যাবে না। ৫) ভ্যাকসিন এর সাথে দেয়া ঔষধ ছাড়া বাইরের অন্য কোন ভ্যাকসিন এর ঔষধ মিক্স আপ করা যাবে না। ৬) ভ্যাকসিন দোকান/পরিবহন কালে বা ফ্রিজে (২°সেঃ থেকে ৪°সেঃ) এর তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।বরফে পরিণত করবেন না। আলো থেকে রক্ষা করতে হবে মানে সূর্যের আলো যেন না পড়ে। ৭) লেবেল ছাড়া কোন ভ্যাকসিন দিবেন না, আর মেয়াদ দেখে নিবেন। ৮) কৃমির ঔষধ ও ভ্যাকসিন কাছাকাছি সময়ের ব্যাবধানে দেয়া যাবে না। ৯) স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে অন্য ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না।
ভ্যাকসিন বা টিকার জন্য উপযুক্ত সময় নীচে দেওয়া হল:
১) স্টক প্রজনন জোড়ার মেটিং এর ৪-৬ সপ্তাহ আগে। ২) রেসিং সিজন শুরু করার ৪-৬ সপ্তাহ আগে।৩)ইয়াং পায়রা নীড় মধ্যে ৪ দিন বয়সের আগে। ৪) প্রদর্শনী জন্য কবুতরকে ৪-৬ সপ্তাহ পূর্বে ।
ভ্যাকসিন বা টিকা দিবার আগে করনীয়ঃ
কৃমির ঔষধ দিবার যে নিয়ম পালন করা হয়, ভ্যাকসিন এর ও ক্ষেত্রে অনেক একই নিয়ম অনুসরন করা ভাল। যেমনঃ
১) বেশি গরমে ভ্যাকসিন দিয়া যাবে না।২) লিভার টনিক দিতে হবে। ৩) ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার আগে সুষম খাদ্য দিতে হবে।৪) সকালে বা রাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা ভাল।৫) ভ্যাকসিন দিবার একদিন পর থেকে ৩ দিন মাল্টি ভিটামিন দিতে হবে। মাল্টীভিটামিন হিসেবে এগুলো খাওয়াতে পারেন(Vitamin bcomvit.Becevit-vet.Rena B+C.Biovit.Toxinil)৬) ভ্যাকসিন দিবার দিন স্যালাইন দিতে হবে। প্রয়োজনে চালের স্যালাইন দিয়া যেতে পারে। ৭) পায়ে বা পাখায় ভ্যাকসিন পুশ করা যাবে না। ৮) সব ধরনের ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রে একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
ভ্যাকসিন করার নিয়মঃ কিলড ভ্যাকসিন পুশ গান বা ইনসুলিন এর সিরিঞ্জ দিয়ে ভ্যাকসিন করতে হয়। পুচ্ছ থেকে ঘাড় অভিমুখে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে পায়রা প্রতি 0.২ মিলি পরিমান ইনজেকশন পুশ করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার পিছনে না পুশ করা হয় বা হাড্ডিতে সূচ না লাগে। এতে কবুতর প্যারালাইস হবার সম্ভাবনা থাকে। লাইভ ভ্যাকসিন সাধারণত ১ চোখে বা ১ নাকে ১ ফোঁটা করে দিতে হয়। সব ক্ষেত্রেই সব গুলো ঔষধ একসঙ্গে মিক্স করতে হয়। ভ্যাকসিন ভায়াল খোলার পর ২ ঘণ্টা সময় পর্যন্ত ব্যাবহারের জন্য উপযুক্ত থাকে।
ভ্যাকসিন ইমিউনিটি স্থিতিকাল বা সময়: কিলড ভ্যাকসিন ১২ মাস। লাইভ ভ্যাকসিন ৩০-৪৫ দিন পর পর।
আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে কবুতরের কোন ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়না। যেগুলো সহজলভ্য। সেগুল সবই হাঁস বা মুরগির(পলট্রি এর জন্য প্রযোজ্য)।এগুলো কতটুকু কাজে আসে সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।কিন্তু তবুও এক বিচিত্র কারনে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বা এক্সপার্ট হিসাবে দাবীকৃত কিছু লোক সকল কবুতর খামারিকে এই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, যেভাবে তারা এটার ব্যাবহার এর পরামর্শ দেন সেটাও সম্পূর্ণ রূপে ভুলে ভরা। এমনকি তারা এইসব কোম্পানির লিখা নির্দেশ ও ঠিক মত পালন করতে বলেন না। ফলে ভ্যাকসিন এর উপকারিতা থেকে অপকারিতাই বেশি হয়। যে সকল কাজের ভ্যাকসিন আছে। সেগুল ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আনা হয়। যা কিনা সাধারন মানুষ কিনতে গেলে,গায়ের লোম খারা হয়ে যাবে এর দাম শুনে। এইসব স্বার্থান্বেষী ব্যাবসায়ি বেশি মুনাফার আশায় বাংলাদেশের বাইরে থেকে এই ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে আসে ও ১০ গুন দামে বিক্রি করে থাকেন। আমাদের দেশে কবুতরের অবকাঠামো উন্নয়ন এর জন্য এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিয়া হয়নি। দু একটা ছাড়া। যায় হোক আমার বাক্তিগত পরামর্শ সকল কবুতর খামারিদের প্রতি যদি সত্যিই ভ্যাকসিন করতে চান,তাহলে উন্নত মানের ভ্যাকসিন ব্যাবহার করুন আর তা না হলে ভ্যাকসিন দিয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন যদি সত্যি সত্যি পারামক্সি ভাইরাস দ্বারা আপনার খামার আক্রান্ত আপনি কিছু বুঝার আগেই আপনার পুরো খামার সাফ হয়ে যাবে, তা এই ভ্যাকসিন দিয়া থাকুক আর নাই থাকুক এতে কোন কাজে আসবে না। অনেকে বলে থাকেন ভ্যাকসিন ৬ মাস দিলেই হয়। কিন্তু এইসব লোক আসলে ভুলের রাজ্যে বাস করে। আপনি যদি ভ্যাকসিন দিয়া শুরু করেন তাহলে অবশ্যই সারা বছর ভ্যাকসিন দিয়া উচিৎ। আর তা না হলে হিতে বিপরিত হতে পারে। তাঁর দায়দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। সেই সব উপদেশ কারীকে তখন আপনার পাশে পাবেন না। তবে আপনি যদি ৩ টি কাজ ঠিক মত করে থাকেন তাহলে আপনাকে আপনার খামার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না। ১) খামার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।২)সাল্মোনিল্লা কোর্স করা। ৩) কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করা। এখন আসুন আমরা জেনেনি কি ধরনের ভ্যাকসিন আপনি ব্যাবহার করলে সত্যিকারের উপকার পাবেন।একটা কথা খেয়াল রাখবেন, প্যারামক্সি ভ্যাকসিন ছাড়া অন্য যে সকল ভ্যাকসিন আছে সেগুলর ব্যাবহারিক কার্যকারিতা খুব একটা নাই।
কি ধরনের ভ্যাকসিন বা টিকা কবুতরের জন্য উপযুক্তঃ ১)Colombovac PMV Vaccine ২)chevivac-P200 Vaccine ৩) Avian PMV vaccine
আপনার কবুতরের একমাত্র অভিভাবক আপনিই আর তাই আপনার কবুতরের ভালমন্দ আপনাকেই বুঝতে হবে। তাই নিজের বিবেক বুদ্ধি ব্যাবহার করবেন। কোনটা আপনার কবুতরের জন্য ভাল আর কোনটা না সেটা আপনি ছাড়া আর ভাল কেউ বুঝবে না। কারন আপনার কবুতর যখন মারা যাবে বা কোন ক্ষতি হবে তখন অন্য সকলের আফসোস করা ছাড়া আর কোন কিছু করার থাকবে না। সফল হলে যেমন আপনার লাভ তেমনি অসফল হলেও আপনারই ক্ষতি। তাই বিচার বিবেচনা আপনারই হাতে।
Credit goes to kf shohel rabbi.
আজকের পোস্ট হচ্ছে কবুতরের ভ্যাকসিন নিয়ে। ভ্যাকসিন কি, ভ্যাকসিন করানো জরুরী কিনা,ভ্যাকসিনের উপকারিতা কি,কখন ভ্যাকসিন করাবেন, কিভাবে ভ্যাকসিন করাবেন সেই বিষয় নিয়ে।
একজন নতুন কবুতর পালক যখন থেকেই কবুতর পালা শুরু করেন তখন তাঁর মনে কবুতর পালা সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারনা দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সেই কবুতর পালক প্রথম থেকেই একটা ভয়-ভীতির মধ্যে দিনপাত করে।কবুতরের সামান্য কিছু হলেই ভয়ে আতঙ্কীত হয়ে পড়েন, ফলে তখন তিনি বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শের জন্য ছুটে যান। আর পরামর্শ দাতারা জানুক আর নাই জানুক তাকে একটা পরামর্শ দিবেই। ফলে সেই নতুন কবুতর পালক নিজের অজান্তেই অল্প দিনের মধ্যে মোটামুটি সব ধরনের ঔষধের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলেন। যদি ভাগ্য ভাল থাকে,আর হয়ত সেই যাত্রাই কবুতর বেচে যেতে পারে। আর যদি কবুতর টি মারা যায় তখন মনকে সান্তনা দেন যে তার হায়াত ছিল না। এটাই হল আমাদের সাধারন দৃশ্য। আর এই দৃশ্যের সূত্রপাত হয় ভ্যাকসিন দিয়ে। অধিকাংশ কবুতর পালকের মনে যে কয়েকটি প্রশ্ন থাকে, তাঁর কয়েকটি হল।
১) কোন ভ্যাকসিন দিব? ২) কয় মাস পর পর দিব? ৩) কিভাবে দিব? ইত্যাদি। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন না করে থাকেন ততক্ষণ পর্যন্ত,সেই খামারি মানসিক ভাবে শান্তি লাভ করেন না। দুখজনক হলেও সত্য, এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমাদের দেশে খুব কম লোকেরই সঠিক ধারণা আছে। অনেকেরই ধারনা যে ভ্যাকসিনই সকল সমস্যার সমাধান। ভ্যাকসিন না দিলে কবুতর মারা যাবে, ভ্যাকসিন না দিলে কবুতর টাল হয়ে যাবে,নানা রোগে আক্রান্ত হবে ,ইত্যাদী। ভ্যাকসিন সম্পর্কে ভাল ধারনা দেবার লক্ষে আমার আজকের এই ছোট প্রয়াস। আশা করি এই পোষ্ট পড়ে কবুতর পালকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।
ভ্যাকসিন এর সংজ্ঞাঃ ভ্যাকসিন হচ্ছে নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যাবহ্রত এক ধরনের বিশেষ টিকা। যা সেই রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে তৈরি করা হয়। সেই নির্দিষ্ট রোগের প্রতিরোধক হিসাবে। অসুস্থতা, অক্ষমতা, এবং মৃত্যু সৃষ্টিকারী অনেক কবুতরের রোগ এখন টিকা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ভ্যাকসিন বা টিকা অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করে ও তথাকথিত সেলুলার ইমিউন সিস্টেম উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
ভ্যাকসিনের প্রকারঃ ভ্যাকসিন সাধারণত ২ প্রকারের ১)লাইভ ভ্যাকসিন ও ২) কিলড ভ্যাকসিন।
১)লাইভ ভ্যাকসিনঃএকটি ক্ষয়িত টীকা বা প্যাথোজেন যার তীব্রতা হ্রাস করে তৈরি একটা টীকা।এটি দুর্বল সংক্রামক এজেন্ট কে নির্মূল করতে কাজ করে যা নির্দোষ বা কম উৎকট হয়ে পরিবর্তিত হয়। ভাইরাস "হত্যা" দ্বারা এই টিকা উত্পাদিত হয়।
এই টিকা স্বল্প সময়ের জন্য দেয়া হয় ও শরীরের বাইরে প্রয়োগ করা হয়।
২) কিলড ভ্যাকসিনঃঅক্রিয়াশীল বা কিছু উপায়ে হত্যা করা হয়েছে এমন একটি সংক্রামক এজেন্ট থেকে তৈরি একটা টীকা। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য দেয়া হয় ও শরীরের ভিতরে প্রয়োগ করা হয়।
সতর্কতাঃ ১) লাইভ ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় খুব সতর্কতা পালন করতে হয়। যেমনঃমাস্ক,গ্লভস পরিধান করা ও খেয়াল রাখতে হয় যেন ভ্যাকসিন মাটিতে না পড়ে এবংঅবশিষ্ট বা বেচে যাওয়া ভ্যাকসিন পুতে ফেলতে হয়।
২) সুস্থ থাকা সব কবুতরকে ভ্যাকসিন করা যেতে পারে। ৩) চিকিত্সাগতভাবে অসুস্থ এবং দুর্বল কবুতরকে ভ্যাকসিন করা যাবে না।৪) ডিম পাড়বে এমন কবুতর কে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়া যাবে না। ৫) ভ্যাকসিন এর সাথে দেয়া ঔষধ ছাড়া বাইরের অন্য কোন ভ্যাকসিন এর ঔষধ মিক্স আপ করা যাবে না। ৬) ভ্যাকসিন দোকান/পরিবহন কালে বা ফ্রিজে (২°সেঃ থেকে ৪°সেঃ) এর তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।বরফে পরিণত করবেন না। আলো থেকে রক্ষা করতে হবে মানে সূর্যের আলো যেন না পড়ে। ৭) লেবেল ছাড়া কোন ভ্যাকসিন দিবেন না, আর মেয়াদ দেখে নিবেন। ৮) কৃমির ঔষধ ও ভ্যাকসিন কাছাকাছি সময়ের ব্যাবধানে দেয়া যাবে না। ৯) স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে অন্য ভ্যাকসিন দেয়া যাবে না।
ভ্যাকসিন বা টিকার জন্য উপযুক্ত সময় নীচে দেওয়া হল:
১) স্টক প্রজনন জোড়ার মেটিং এর ৪-৬ সপ্তাহ আগে। ২) রেসিং সিজন শুরু করার ৪-৬ সপ্তাহ আগে।৩)ইয়াং পায়রা নীড় মধ্যে ৪ দিন বয়সের আগে। ৪) প্রদর্শনী জন্য কবুতরকে ৪-৬ সপ্তাহ পূর্বে ।
ভ্যাকসিন বা টিকা দিবার আগে করনীয়ঃ
কৃমির ঔষধ দিবার যে নিয়ম পালন করা হয়, ভ্যাকসিন এর ও ক্ষেত্রে অনেক একই নিয়ম অনুসরন করা ভাল। যেমনঃ
১) বেশি গরমে ভ্যাকসিন দিয়া যাবে না।২) লিভার টনিক দিতে হবে। ৩) ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার আগে সুষম খাদ্য দিতে হবে।৪) সকালে বা রাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা ভাল।৫) ভ্যাকসিন দিবার একদিন পর থেকে ৩ দিন মাল্টি ভিটামিন দিতে হবে। মাল্টীভিটামিন হিসেবে এগুলো খাওয়াতে পারেন(Vitamin bcomvit.Becevit-vet.Rena B+C.Biovit.Toxinil)৬) ভ্যাকসিন দিবার দিন স্যালাইন দিতে হবে। প্রয়োজনে চালের স্যালাইন দিয়া যেতে পারে। ৭) পায়ে বা পাখায় ভ্যাকসিন পুশ করা যাবে না। ৮) সব ধরনের ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রে একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
ভ্যাকসিন করার নিয়মঃ কিলড ভ্যাকসিন পুশ গান বা ইনসুলিন এর সিরিঞ্জ দিয়ে ভ্যাকসিন করতে হয়। পুচ্ছ থেকে ঘাড় অভিমুখে শিরদাঁড়ার শেষ প্রান্তে পায়রা প্রতি 0.২ মিলি পরিমান ইনজেকশন পুশ করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার পিছনে না পুশ করা হয় বা হাড্ডিতে সূচ না লাগে। এতে কবুতর প্যারালাইস হবার সম্ভাবনা থাকে। লাইভ ভ্যাকসিন সাধারণত ১ চোখে বা ১ নাকে ১ ফোঁটা করে দিতে হয়। সব ক্ষেত্রেই সব গুলো ঔষধ একসঙ্গে মিক্স করতে হয়। ভ্যাকসিন ভায়াল খোলার পর ২ ঘণ্টা সময় পর্যন্ত ব্যাবহারের জন্য উপযুক্ত থাকে।
ভ্যাকসিন ইমিউনিটি স্থিতিকাল বা সময়: কিলড ভ্যাকসিন ১২ মাস। লাইভ ভ্যাকসিন ৩০-৪৫ দিন পর পর।
আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে কবুতরের কোন ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়না। যেগুলো সহজলভ্য। সেগুল সবই হাঁস বা মুরগির(পলট্রি এর জন্য প্রযোজ্য)।এগুলো কতটুকু কাজে আসে সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।কিন্তু তবুও এক বিচিত্র কারনে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বা এক্সপার্ট হিসাবে দাবীকৃত কিছু লোক সকল কবুতর খামারিকে এই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যাবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, যেভাবে তারা এটার ব্যাবহার এর পরামর্শ দেন সেটাও সম্পূর্ণ রূপে ভুলে ভরা। এমনকি তারা এইসব কোম্পানির লিখা নির্দেশ ও ঠিক মত পালন করতে বলেন না। ফলে ভ্যাকসিন এর উপকারিতা থেকে অপকারিতাই বেশি হয়। যে সকল কাজের ভ্যাকসিন আছে। সেগুল ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আনা হয়। যা কিনা সাধারন মানুষ কিনতে গেলে,গায়ের লোম খারা হয়ে যাবে এর দাম শুনে। এইসব স্বার্থান্বেষী ব্যাবসায়ি বেশি মুনাফার আশায় বাংলাদেশের বাইরে থেকে এই ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে আসে ও ১০ গুন দামে বিক্রি করে থাকেন। আমাদের দেশে কবুতরের অবকাঠামো উন্নয়ন এর জন্য এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিয়া হয়নি। দু একটা ছাড়া। যায় হোক আমার বাক্তিগত পরামর্শ সকল কবুতর খামারিদের প্রতি যদি সত্যিই ভ্যাকসিন করতে চান,তাহলে উন্নত মানের ভ্যাকসিন ব্যাবহার করুন আর তা না হলে ভ্যাকসিন দিয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন যদি সত্যি সত্যি পারামক্সি ভাইরাস দ্বারা আপনার খামার আক্রান্ত আপনি কিছু বুঝার আগেই আপনার পুরো খামার সাফ হয়ে যাবে, তা এই ভ্যাকসিন দিয়া থাকুক আর নাই থাকুক এতে কোন কাজে আসবে না। অনেকে বলে থাকেন ভ্যাকসিন ৬ মাস দিলেই হয়। কিন্তু এইসব লোক আসলে ভুলের রাজ্যে বাস করে। আপনি যদি ভ্যাকসিন দিয়া শুরু করেন তাহলে অবশ্যই সারা বছর ভ্যাকসিন দিয়া উচিৎ। আর তা না হলে হিতে বিপরিত হতে পারে। তাঁর দায়দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। সেই সব উপদেশ কারীকে তখন আপনার পাশে পাবেন না। তবে আপনি যদি ৩ টি কাজ ঠিক মত করে থাকেন তাহলে আপনাকে আপনার খামার নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না। ১) খামার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।২)সাল্মোনিল্লা কোর্স করা। ৩) কৃমির ঔষধ প্রয়োগ করা। এখন আসুন আমরা জেনেনি কি ধরনের ভ্যাকসিন আপনি ব্যাবহার করলে সত্যিকারের উপকার পাবেন।একটা কথা খেয়াল রাখবেন, প্যারামক্সি ভ্যাকসিন ছাড়া অন্য যে সকল ভ্যাকসিন আছে সেগুলর ব্যাবহারিক কার্যকারিতা খুব একটা নাই।
কি ধরনের ভ্যাকসিন বা টিকা কবুতরের জন্য উপযুক্তঃ ১)Colombovac PMV Vaccine ২)chevivac-P200 Vaccine ৩) Avian PMV vaccine
আপনার কবুতরের একমাত্র অভিভাবক আপনিই আর তাই আপনার কবুতরের ভালমন্দ আপনাকেই বুঝতে হবে। তাই নিজের বিবেক বুদ্ধি ব্যাবহার করবেন। কোনটা আপনার কবুতরের জন্য ভাল আর কোনটা না সেটা আপনি ছাড়া আর ভাল কেউ বুঝবে না। কারন আপনার কবুতর যখন মারা যাবে বা কোন ক্ষতি হবে তখন অন্য সকলের আফসোস করা ছাড়া আর কোন কিছু করার থাকবে না। সফল হলে যেমন আপনার লাভ তেমনি অসফল হলেও আপনারই ক্ষতি। তাই বিচার বিবেচনা আপনারই হাতে।
Credit goes to kf shohel rabbi.
0 মন্তব্যসমূহ