কবুতরের ডেপথিরিয়া (Diphtheria)
কবুতরের ডেপথিরিয়া একটি মারাত্মক রোগ। এটি একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগ ডাল
পালার মত দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং শেষ পর্যায়ে হৃত্পিণ্ড ,যকৃত ,ফুসফুস ইত্যাদি আক্রান্ত হয়ে
কবুতর মারা যায়। এই রোগে মৃত্যুর হার খুব বেশি।
অনেক সময় আরোগ্য লাভের পরও হৃত্পিণ্ড এর অস্বাভাবিক দুর্বলতার কারণে ও পর্যাপ্ত যত্নের অভাবে মারা যায়। এইজন্য রোগ মুক্তির পরও একটু খেয়াল রাখতে হয়। এই রোগে খুব দ্রুত চিকিৎসা না দিলে মারা যায়। এই রোগে মৃত্যুর হার ৯০ ভাগ,তাহলে বুজতে পারছেন এই রোগটা কত ভয়াবহ।আপনি কিছু বুজে ওটার আগেই হয়তো আপনার কবুতর মারা যেতে পারে।সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে তাই এই সময় বিশেষ নজর দিতে হবে ।
ডেপথিরিয়া রোগের কারনঃ
এই রোগের মুখ্য কারন হিসাবে Micrococci নামক ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জীবাণুকে দায়ী করা হয়। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। নোংরা খাবার ও পানির পাত্র, বেড়াল ও ইঁদুর বা তেলেপোকার খাবারে মুখ দিলে বা কামড়ান বা এর লোম পেটে গেলে ইত্যাদি এই রোগ হতে পারে। ধুলো, পানি ও বায়ুর মাধমেও ছড়াতে পারে।
ডেপথিরিয়া রোগের লক্ষণঃ
1 এই রোগের প্রথম লক্ষণ হিসাবে দেহে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা যায়।
2 নাক ও মুখ দিয়ে পানি পড়া ।
3 বিষ্ঠা হালকা সবুজ,বা সাদা বা সাধারন রং এর হতে পারে।
4 পাখি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।
5 শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
6 আংশিক পা বা পাখা পক্ষাঘাত।
7 ধীরে ধীরে কাশি শুরু হয়(যদিও অনেকে এটা ঠাণ্ডা বলে ভুল করে থাকে।)
8 মুখে ও জিব্বায় সাদা জিল্লির মত দেখা যায়, মাঝে মাঝে লম্বা সুতার মত মুখের ভিতর দেখা যায়,
তাই অনেকে কৃমি বলে মনে করে থাকে। (অনেকে এটা ক্যাংকার বলেও ভুল করে থাকে।)
9 পেশী দুর্বলতা ও চোখ সংক্রমণ হয়।
10 মুখে দুর্গন্ধ থাকে এবং পরে পানি ও অভুক্ত খাবার সহ দুর্গন্ধ যুক্ত বমি নাক মুখ দিয়ে বের হয়ে
আসে।
11 অনেক সময় গলা ফুলে টনসিল এর মত হয় কিন্তু তন্সিলের মত গতা বিচি মত হয় না।(অনেকে
এটা টনসিল বলে ভুল করে থাকে।)
12 খাবার গিলতে খুব কষ্ট হয় তাই খাবার মুখে নিয়ে ফেলে দেয়।
13 অনেক সময় কাশির সাথে রক্ত পড়তে পারে।
14 পাখি লোম ফুলিয়ে এক জাগায় বসে থাকে।
15 শেষ পর্যায়ে ঘাড় শক্ত হয়ে যায় ও প্রচণ্ড কাশি ও সর্দির লক্ষণ দেখা যায়।
16 মুখের সাদা পর্দা দেখা যায় এবং এটা তুললে কাচা ঘা দেখা যায়।
17 এই রোগের পরবর্তি পর্যায়ে কাশির প্রভাব বেড়ে যায় তাই অনেকে দেখে ঘুংরি কাশি বলেও ভুল
করে থাকে ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকে যা পাখির জন্য প্রানহানিকর হয়।
প্রতিরোধঃ
# নিয়মিত খাবার ও পানির পাত্র ডেটল পানি দিয়ে ধুতে হবে।
# খামার পুরিস্কার রাখতে হবে।
# পোকামাকড়,ইঁদুর ও বিড়াল কে আটকাতে হবে যাতে খামারে প্রবেশ না করে।
# বাইরের স্যান্ডেল পরিহার করতে হবে।
# নিয়মিত জীবাণু মুক্ত স্প্রে বা চুন অথবা বরিক পাওডার ছিটাতে হবে।
# টিনের খাবার পাত্র জং ধরে গেলে বাদ দিতে হবে।
চিকিৎসাঃ
হোমিও ডিপথেরিয়াম-২০০, ১ ফোটা করে দিনে ৩ বার ও আলপথি Zimax 200mg(squere) 15 ml 2 চামুচ পানিতে মিক্স করে 3 ফোটা করে দিনে 2
বার ৫ দিন দিবেন। মুখে ঘা থাকলে Apsol cream লাগাবেন দিনে ২ বার করে। পেগ
কে আলাদা রাখবেন। আর রোগ ভাল হবার পর একটু খেয়াল রাখবেন। আর হাত ভাল করে ওয়াশ
করবেন।জামা কাপর পরিবর্তন করে ফেলবেন। এই রোগের জীবানু অক্সিজেন এ বাঁচে না।তাই
এলো বাতাসে রাখবেন। আর একটু ভাল হলে ধরে গোসল দিয়ে দিবেন। এই রোগের জিবানু মুখের
লালার মাধমে গিয়ে বিষে পরিণত হয়। এবং এই রোগ হার্ট এ প্রচুর ইফ্যাক্ট করে। তাই হার্ট খুব
উইক হয়ে যায়।তাই ভাল হবার পরও অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়।
# ঠাণ্ডা পানি দেওয়া যাবে না।
# নিয়মিত বারলি,সাগু বা আটা গুলিয়ে ৫ সিসি করে দিনে ৩ বার দিতে হবে।(তবে ঔষধ দিবে পরে
এবং হালকা গরম পানির সাথে।
# রোগ ভাল হবার পরও নিয়মিত স্যালাইনে বা রাইছ সেলাইন, ভিটামিন দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে এই রোগ গ্রীষ্ম ও বর্ষা বেশি দেখা, তাই এই সময়ে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিয়মিত প্রতিরোধ ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে হবে, কারন রোগ নির্ণয় ও পরবর্তী চিকিৎসা ও যত্ন অনেকেই হয়তো ঠিকমত
নাও করতে পারেন। ফলস্বরূপ আপনার কবুতরের অনাখাঙ্কিত মৃত্যু।
মূল লেখকঃ সোহেল রাব্বি
tag: ডেপথিরিয়া, কবুতরের ডেপথিরিয়া কি, কারণ, কবুতরের ডেপথিরিয়া রোগের ওষুধ
0 মন্তব্যসমূহ